আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সাবেক প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল মহসেন রেজায়ি বলেছেন, গত মাসে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পাল্টা জবাবের মাধ্যমে ইরান প্রমাণ করেছে যে, তারা ওয়াশিংটন ও তেলআবিবকে একসাথে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে রেজায়ি বলেন, ইরানের এই সফল প্রতিরোধ লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানির সেই কথার কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের চ্যালেঞ্জ করতে পারি।’
গত ১৩ জুন ইসরাইলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের অভূতপূর্ব সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তায় ইরানের উপর একাধিক বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী দ্রুত প্রতিরক্ষামূলক তৎপরতা শুরুর পর পাল্টা আক্রমণে যায়।
এই অভিযানে ইরান অধিকৃত ফিলিস্তিনের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক, সামরিক ও শিল্প স্থাপনায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সশস্ত্র ড্রোন হামলা চালায়। তেলআবিব, হাইফা এবং বেইর শেভাসহ ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে এই হামলা চালানো হয়।
টানা পাল্টা হামলার কারণে মাত্র বারো দিনের মধ্যে ইসরাইল যুদ্ধবিরতির জন্য তৎপর হয়, যদিও তারা নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও ব্যবহার করেছিল।
ইসরাইলি সংবাদ মাধ্যম জানায়, এই হামলার ফলে বাট ইয়াম শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, যা গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত দৃশ্যের মতো হয়ে যায়। পাল্টা হামলায় ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ঘাঁটি আল-উদেইদেও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব হিসেবে আসে।
রেজায়ি বলেন, ‘কোনো দেশই এমন হামলা চালানোর সাহস দেখায় না। এমনকি চীনও এমন হামলা চালানোর সাহস করে না।
তিনি বলেন, কাতারি সূত্র অনুযায়ী আল-উদেইদ ঘাঁটিতে পাঁচ থেকে ছয়টি বিস্ফোরণ হয়েছিল, যদিও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল কেবল একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল।
রেজায়ি আরও বলেন, এই পাল্টা আক্রমণ ইরানের শক্তির প্রদর্শন এবং অঞ্চলে ইরানের মর্যাদা বৃদ্ধির প্রমাণ। তিনি বলেন, ‘একটি অর্থে, আমরা শীর্ষে পৌঁছানোর দিকে যাত্রা শুরু করেছি, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো থেমে না যাওয়া, যদিও ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের থামানোর জন্য কঠোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এই প্রতিরোধ প্রমাণ করেছে যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র আস্থা রাখার মতো শক্তি, যা অনেক আঞ্চলিক দেশ উপলব্ধি করেছে।
রেজায়ি বলেন, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র এক বছরের বেশি সময় ধরে ইরানের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করেছিল এবং গ্রিস ও ভূমধ্যসাগরে মহড়া করেছিল, কিন্তু তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ইরানে বিশৃঙ্খলা তৈরি, রাজধানী তেহরানে বিরোধী শক্তিকে ঢোকানো এবং ইরানকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হয়েছে।
তাদের পরিকল্পনায় সিরিয়ার মতো ইরানের সামরিক অবকাঠামোর উপর ব্যাপক হামলা চালানোরও পরিকল্পনা ছিল, যা ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ইরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তারা তা করতে পারেনি।
রেজায়ি বলেন, এই যুদ্ধে ইসরাইল প্রায় বিশ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মহামূল্যবান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষয় হয়েছে, যা তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র দুই বছর সময় নিয়েছিল।তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের প্রতিটি পরাজয় আমাদের বিজয়ের সমান, যা তাদের ব্যয়, নিরাপত্তার ভাঙন এবং তাদের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
Your Comment